Sunday, December 18, 2011

বিএনপি জামায়াত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচাল করতেই হামলা ভাংচুর ॥ আওয়ামী লীগ

বিএনপি জামায়াত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে
যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচাল করতেই হামলা ভাংচুর ॥ আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুর্নীতিবাজ তারেক-কোকোকে রক্ষা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করতেই কোন কর্মসূচী ছাড়াই বিএনপি-জামায়াত জোট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পরিকল্পিতভাবে বোমাবাজি, হামলা, ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি বলেছে, জনগণের রায় নিয়ে গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না জেনেই দেশে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে প্রয়োজনে আবার রক্তপাত ঘটিয়ে পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই অশুভ জোটটি।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ এবং মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়াকে দায়ী করেছেন। রবিবার দুপুরে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বেগম জিয়ার নির্দেশে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা।
রবিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াত জোটের বোমাবাজি, অগি্নসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিকেলে ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। লিখিত বক্তব্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের এই কাপুরুষোচিত হামলার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই পুত্র তারেক-কোকোসহ পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, অর্ফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতসহ দুর্নীতির মামলা থেকে রৰা করা, পাকহানাদার বাহিনীর দোসর দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। একইসঙ্গে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার বানচাল করার উদ্দেশ্যে মরিয়া হয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করাও তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিকেলে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের একটি কর্মসূচী ছিল। কিন্তু ভোরে ফজরের নামাজের পর বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা রাসত্মায় নেমে এমন হামলা, বোমাবাজি ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটাল কেন? সকালে কি তাদের কোন কর্মসূচী ছিল? কমান্ডো স্টাইলে এই হামলাই প্রমাণ করে দেশকে অস্থিতিশীল করতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এসব তা-ব চালানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশে হত্যা, গুপ্তহত্যাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। নিজেরা হত্যা করে উল্টো জনগণকে বিভ্রানত্ম করতে সমবেদনা জানানোই বিএনপির জন্মচরিত্র। তদনত্ম করে অবশ্যই হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির ব্যবস্থা করা হবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।
বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, পুরনো হত্যা, ষড়যন্ত্র ও রক্তপাতের পথে আর ৰমতায় আসা সম্ভব নয়। মিথ্যাচার ও শঠতা করে দেশবাসীকে বিভ্রানত্ম করা যাবে না। তাই এখনও সময় আছে ষড়যন্ত্র, বোমাবাজি, গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাসীমূলক হঠকারী ও অগণতান্ত্রিক জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী পথ ছেড়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় ফিরে আসুন। অস্থিতিশীল সাংঘর্ষিক রাজনীতি পরিহার করম্নন। দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি রক্ষার জন্য দেশকে আপনারা আর ধ্বংস করবেন না।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, দুবর্ৃত্তায়ন এবং সন্ত্রাসের অপরাজনীতির বিরম্নদ্ধে সতর্ক থাকুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। যে কোন মূল্যে দেশে শানত্মি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখুন। আসুন আমরা বাংলার গণমানুষের অবিসংবাদিত নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে দিনবদলের সংগ্রামকে আরও বেগবান করি।
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, যারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও আন্দোলনের নামে মানুষের প্রাণহরণ, সম্পদ বিনষ্ট, জনদুর্ভোগ, বোমাবাজি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে_ তারা দেশ ও জাতির শত্রম্ন। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী কোন রাজনৈতিক দল এবং তাদের কর্মীরা এ ধরনের ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ করতে পারে না। গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই সকল ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসী কর্মকা-ের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজাগ ছিল বলেই আকস্মিক এ হামলা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারেনি। যে কোন সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরম্নদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আওয়ামী লীগও জনগণকে সচেতন করে ঐক্যবদ্ধভাবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রসত্মকারীদের সকল ষড়যন্ত্র আমরা রম্নখে দেব।
ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা নূহ-উল-আলম লেনিন, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, ডা. মোসত্মফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি, মৃণাল কানত্মি দাস, অসীম কুমার উকিল, ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবস্নু, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এমপি, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সানজিদা খানম এমপি, অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলনে মাহবুব-উল-আলম হানিফ অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের এই বর্বরোচিত নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী কর্মকা-ে এক ব্যক্তি মর্মানত্মিকভাবে মৃতু্যবরণ করেন। সিলেট, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জেলায় অনুরূপ হামলা পরিচালিত হয় এবং সিলেটে গাড়িতে অগি্নদগ্ধ হয়ে একজন নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, ভয়-ভীতির সঞ্চার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং নানাবিধ নাশকতামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জনগণের স্বাভাবিক নাগরিক জীবনযাপনে বাধা দিয়ে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া দুবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার সম্পর্কে ভাল করেই জানেন। কিন্তু মহান বিজয় দিবসে পরিকল্পিতভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করতেই প্রধানমন্ত্রীর আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে গিয়েছিলেন। আসলে খালেদা জিয়া পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত ও তাঁর দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রকে রৰা করতে চান।
উলেস্নখ্য, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিন সাংবাদিক একটি ট্যাঙ্কি্যাব ভাড়া নিয়ে ধানম-ির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আসার পথে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বোমা হামলার শিকার হন। গাড়িটিকে লৰ্য করে পর পর চারটি বোমার বিস্ফোরণ করা হলেও অল্পের জন্য প্রাণে রৰা পান দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি শাবান মাহমুদ, দৈনিক সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম রনি এবং দৈনিক আমাদের অর্থনীতির স্টাফ রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম। সাংবাদিক সম্মেলনে এ হামলার নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা হামলাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির আশ্বাস দেন।
বোমাবাজি-মানুষ হত্যায় খালেদা জিয়া দায়ী_ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন তাঁর নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রবিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি, অগি্নসংযোগ এবং মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বেগম জিয়ার নির্দেশে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপি, জামায়াত এবং শিবির ক্যাডাররা। বেগম জিয়াকে দায়ী করা হলেও তাঁর বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। এ সংক্রানত্ম এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন নেয়া হবে তখন আপনারা দেখতেই পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হবে। আদালতে এ সংক্রানত্ম আবেদনের শুনানি চলছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আদালত শুনানির জন্য আগামী ২৬ তারিখ দিন নির্ধারণ করেছে। আদালত যে নির্দেশনা দেবে তা পালন করা হবে।
কীসের জন্য এবং কার স্বার্থে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা করা হচ্ছে তা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চেয়ে এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, আপনার (খালেদা) দলের সন্ত্রাসীদের এসব নির্দেশনা দেয়া ঠিক হচ্ছে না। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে রোডমার্চসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে এবং এই হামলার ঘটনার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দেয়ারই বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা।
রাজধানীর অস্থিরতা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। ঘটনা পরিকল্পিত হলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে থেকে তথ্য ছিল বলেই বিশৃঙ্খলাকারীদের শুরম্নতেই বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরেও এমন সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরত করা যদি ব্যর্থতা হয় তাহলে সফলতা কী?
ঢাকা ও সিলেটে দুজন নিহত হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মতিঝিলে বোমা হামলায় আরিফুজ্জামান আরিফ নামে ড্রাইভিং শিখতে যাওয়া একজন এবং সিলেটে গাড়িতে আগুন দিলে এক বৃদ্ধ গাড়ি থেকে নামতে না পারায় পুড়ে মারা যান। এছাড়া আরও একজন মতিঝিলে বোমা হামলায় আহত হয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে পাঁচটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে এবং এর মধ্যে একটি পুলিশের ভ্যান, দুটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের।

No comments:

Post a Comment